ক্ষমতা কাকে বলে: আমরা জানি কোনো কিছু কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বা ক্ষমতা বলা হয়। আজকের এই আর্টিকেল এ আমরা ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানবো।
তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, ক্ষমতা কাকে বলে।
সূচীপত্র
ক্ষমতা কাকে বলে? (শারীরিক ভাবে)
ক্ষমতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Power যা ফরাসি শব্দ “Pouvoir” এবং লাতিন শব্দ “Potestas” থেকে উৎপত্তি এর অর্থ হল সমক্ষমতা।
সময়ের সাপেক্ষে কার্য করার হারকে ক্ষমতা বলে।
ক্ষমতা = কৃতকার্য / সময়।
উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক, একজন কুলি একই বোঝা সিঁড়ি বেয়ে একই উচ্চতায় তুলতে পারে হেঁটে অথবা দৌড়িয়ে তুলতে পারে। যখন সে দৌড়ে ওঠে তখন হাঁটার তুলনায় বেশি ক্লান্ত বোধ করে। কারণ হিসেবে বলা যায় হাঁটার তুলনায় দৌড়ে উঠলে কার্য করার হার অনেক বেশি হয়। তাই দৌড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি ক্ষমতার প্রয়োজন হয়।
একজন শক্ত সামর্থ্য মানুষ, সমান ওজনের দুর্বল মানুষের তুলনায় বেশি তাড়াতাড়ি পাহাড়ে উঠতে পারে, কারো অনেক প্রথম জনের ক্ষমতা বেশি।
ক্ষমতার একক কি?
S.I পদ্ধতিতে ক্ষমতার একক হল ওয়াট বা জুল/ সেকেন্ড।
C.G.S পদ্ধতিতে ক্ষমতার একক হল আর্গ / সেকেন্ড।
অশ্বক্ষমতা – ৫৫০ পাউন্ড ভরের কোন বস্তুকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে ১ সেকেন্ডে ১ ফুট উপরে তুলতে যে ক্ষমতার প্রয়োজন হয়, তাকে ১ অশ্বক্ষমতা বলে।
ক্ষমতা কাকে বলে? (রাজনীতিতে)
যখন নিজের ক্ষমতা থাকবে তখন নিজেকে কি রূপের ক্ষমতা রয়েছে তা নিজেকেই দেখতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, শক্তিটি যেকোনো শক্তির উপর ভিত্তি করে হতে পারে। যেমন – ভৌগোলিক শক্তি হোক বা সামরিক শক্তি হোক এবং অর্থনীতির শক্তিই হোক। ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত এত ক্ষমতাবান শক্তিশালী দেশ তাদের কাছে নিম্নমানের শক্তির ব্যবহার করে অন্যান্য দেশগুলিতে পার্থক্য আনার মত পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক শক্তি রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো জাতীয় শক্তি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ক্ষমতা পালন করতে পারে, একটি ছোট রাষ্ট্র সেই একই ভূমিকা পালন করতে পারে না। ভূমিকার এই উৎসই হল শক্তি। প্রত্যেক রাষ্ট্রের হাতিয়ার হল শক্তি। শক্তির দাড়াই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোন একটি দেশ নিজের স্থান করে নেয়। হ্যান্স মরগেনথাউ ( Hans Morgenthau) এর মতে, ” ক্ষমতা হলো অন্যের মন ও কাজকর্মের ওপর একজন মানুষের নিয়ন্ত্রণ “। জোসেফ ফ্রাঙ্কেল বলেছেন – ” অন্যের মন ও কার্যকে নিয়ন্ত্রণ করে কাঙ্খিত ফল লাভের সামর্থই হল ক্ষমতা “।
এভাবেও বলা যায় ক্ষমতা বলতে অন্যকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্যকে বোঝায়, যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকারী তার ইচ্ছামত কাজ করতে অন্যদের বাধ্য করে। যেমন –
(১) অর্থনীতি: বর্তমানে অর্থনীতি হলেও দেশের মানদন্ড। শিল্পের প্রসার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনুকূল অবস্থা ইত্যাদি হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সূচক সমূহ। জনসাধারণের কল্যাণ সাধন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার সম্পর্কযুক্ত।
(২) সামরিক শক্তি: কোন দেশ তখনই শক্তিশালী বলা হবে যখন তার সামরিক শক্তি বেশি থাকবে। তবে এই ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হতে হবে। যেমন – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে দুটি শহরকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল।
(৩) মনস্তত্ত্ব: জাতীয় শক্তির অন্যতম উপাদান হলো মনস্তত্ত্ব। একটি জাতির মধ্যে যখন আত্মবিশ্বাস থাকবে তখন তারা নিজেকে উন্নতিতে সার্বিকভাবে সচেষ্ট হবে তখন তাদের সামগ্রিক উন্নতি ঘটবে। এই কারণে হিটলার জার্মানির মধ্যে আর্য জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেছিলেন।
(৪) কূটনীতি: কূটনীতির গুণগত দিক হলো জাতীয় ক্ষমতার উপাদান সমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের সরকার যে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে তার বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয়। কূটনীতিবিদদের উপর, শান্তির সময়ে একটি জাতির পররাষ্ট্র বিষয়ক আচরণের ওপর তার জাতীয় শক্তির হ্রাসবৃদ্ধি যথেষ্ট পরিমাণে নির্ভরশীল। বলা বাহুল্য এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিনিধি হিসেবে বিদেশে অবস্থানকারী রাষ্ট্রদূতদের উপর।
(৫) সরকার: জাতীয় ক্ষমতার ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ ও নির্ধারিত নীতির পক্ষে জনসমর্থন সংগ্রহ সরকারের গুরু দায়িত্ব।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যেতে পারে যে, কোন একটি দেশের জাতীয় শক্তি কতখানি তা বিচার করার সময় কেউ কেউ বিশেষ কোনো একটি উপাদানকে এরূপ শক্তির নির্ধারকের আসনে বসিয়ে অন্যান্য উপাদানের গুরুত্বকে কার্যত অস্বীকার করেন।
যেসব উপাদান একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে অন্য সময়ই সেই সব উপাদানের ওই ভূমিকার নাও থাকতে পারে। জাতীয় শক্তির বিভিন্ন উপাদানের অবস্থিতি যথেষ্ট নয় একটি দেশের সরকার যে গুলির যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে কিনা তার ওপর এই দেশের জাতীয় শক্তি নির্ভর করে।
জাতীয় ক্ষমতা কাকে বলে?
জাতীয় ক্ষমতার সংজ্ঞা: বিভিন্ন রাষ্ট্র দর্শনের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ক্ষমতার সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। লাস – অয়েল ও কাপলান ক্ষমতা বলতে বুঝিয়েছেন, ” সিদ্ধান্ত গ্রহণের কার্যকলাপে অংশগ্রহণ ” ( power the participation in the making of decision.)
রাসেলের মতে: ” আকাঙ্ক্ষিত বা প্রত্যাশিত ফলাফল উৎপাদনই ক্ষমতা “। ( Power is the production of intended effects.)
জাতীয় ক্ষমতার মূল উপাদান গুলি কি কি?
কোন একটি রাষ্ট্রের শক্তি বিভিন্ন প্রকার উপাদানের ওপর নির্ভর করে এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি হল –
(১) ভৌগলিক অবস্থান: জাতীয় শক্তির প্রথম ও প্রধান উপাদান হল ভৌগোলিক অবস্থান। এটি একটি স্থায়ী উপাদান যার উপরে কোনো জাতির শক্তি নির্ভরশীল। এই উপাদানের মধ্যে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রের আয়তন, অবস্থান ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু।
(২) প্রাকৃতিক সম্পদ: প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে প্রাকৃতিক পদ ও উপযোগিতা সম্পন্ন দ্রব্যকে বঝায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সম্পদ ও বনজ সম্পদ না থাকলে যে কোন দেশের পক্ষে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক সম্পদের মাধ্যমে এই দেশের শিল্পায়ন সম্ভব হয়।
(৩) জনসংখ্যা: কোন রাষ্ট্রের শক্তি সেই রাষ্ট্রের জনসংখ্যার ওপর কিছু পরিমাণে নির্ভর করে। সামরিক শক্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট লোকবল প্রয়োজন। তবে জনসংখ্যা অধিক হলেই যথেষ্ট নয়, তাদের উৎপাদন ক্ষমতা, অর্থনৈতিক মান, উদ্যম, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ইত্যাদির উপর দেশের শক্তি নির্ভর করে।
(৪) শিল্পের উন্নয়ন: আধুনিক যুগে কোদরাষ্ট্রের শিল্পায়ন ও প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক সামর্থ্য। অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদন্ড হিসেবে জনগণের উৎপাদন ক্ষমতা, মাথাপিছু আয়, জীবনযাত্রার মান ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা যায়।
(৫) মনস্তাত্ত্বিক উপাদান: কোন জাতির আত্মবিশ্বাস ও নৈতিক শক্তির উপর জাতীয় শক্তি নির্ভরশীল কোন জাতির আত্মবিশ্বাস দুর্বল হলে এবং জাতীয় স্বার্থ স্পেলে সেই জাতির পক্ষে শক্তিশালী হয়ে ওঠা সম্ভাব হয় না।
উপসংহার: জাতীয় শক্তির উপাদানগুলির প্রত্যেকটি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং, কোন একটি উপাদানের পরিবর্তন ঘটলে অন্যান্য উপাদানগুলি ও প্রভাবিত হবার সম্ভাবনা থাকে। তার ফলে জাতীয় শক্তির তারতম্য ঘটতে পারে।
আশাকরছি উপরে দেওয়া ক্ষমতা কাকে বলে এবং ক্ষমতা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য যথাযথভাবে দিতে পেরেছি। যদি কোন প্রশ্ন থাকে আপনারা নিচে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন।
Answer champ সাইটটি প্রতিদিন ফলো করবেন এই ধরনের সুন্দর সুন্দর তথ্য বাংলায় পাওয়ার জন্য। ধন্যবাদ।।